অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। লাল-সবুজের জার্সিতে মাঠ কাঁপাতে বাংলাদেশে এসেছেন দেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা হামজা দেওয়ান চৌধুরী। এখন শুধু লাল-সবুজের জার্সি গায়ে মাঠে নামার অপেক্ষা। সোমবার সকাল ১১ টা ৩৪ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন লেস্টার সিটির এই তারকা। এসময় তার সাথে ছিলেন তার মা, স্ত্রী, ৩ সন্তান ও ২ ভাই। তাকে বরণ করতে এর আগেই দেশে পৌঁছান হামজার বাবা মুর্শেদ দেওয়ান চৌধুরী। সিলেট এয়ারপোর্ট থেকে হামজা সরাসরি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট গ্রামে নিজ বাড়িতে রওয়ানা দেন। আর আগামী ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক হবে হামজা দেওয়ান চৌধুরীর।
৪.৫ মিলিয়ন ইউরোর এই তারকা খেলোয়াড় বাংলাদেশের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়। ১৯৯৭ সালের ১ অক্টোবর ইংল্যান্ডের লাফবরো’তে জন্ম নেওয়া হামজার বাড়ি বাংলাদেশের সিলেটের হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই ইংল্যান্ডে বড় হওয়া হামজার ফুটবলের প্রতি ঝোঁক। সেখানে বিভিন্ন প্রিমিয়ার লীগে খেললেও ছোট বেলা থেকেই বাংলাদেশের প্রতি অন্যরকম টান ছিল হামজার। ছেলেকে দেশের জার্সিতে খেলতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন বাবা। তার স্বপ্ন পূরণ এখন স্রেফ সময়ের ব্যাপার। আগামী ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামলেই তার সহ পুরো দেশব্যাপীর অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে।
দেশের হয়ে লাল-সবুজের জার্সিতে খেলতে সোমবার দেশে ফিরেন হামজা। দেশে ফেরার ২ ঘণ্টা পূর্বেও প্রিমিয়ার লীগের একটি খেলা শেষ করে তিনি এসেছেন। তাকে বরণ করে নিতে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকাল থেকেই ভিড় করেন বিপুলসংখ্যক ফুটবলপ্রেমী ও ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তা। ছিলেন অনেক গণমাধ্যমকর্মী ও ইউটিউবারা। সবারই আগ্রহের মধ্যমনি ২৭ বছর বয়সী হামজা দেওয়ান চৌধুরী। বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইট তাকে নিয়ে সোমবার ১১ টা ৩৪ মিনিটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে সেখানে বিমান ও বাফুফের কর্মকর্তারা তাকে সেখানে অভ্যর্থনা জানান। পরে ভিআইপি লাউঞ্জের বাইরে অবস্থান করা গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলার জন্য তিনি গেট দিয়ে বেরিয়ে সিঁড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই ভিড়ে চিঁড়েচ্যাপ্টা হওয়ার উপক্রম হামজা চৌধুরীর। বাফুফে কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর উৎসুকদের ফাঁক গলে যখন সামনে আসলেন, চোখের সামনে শত শত ক্যামেরা, মোবাইল ফোন আর মানুষের ভিড়। সবাই হামজার কাছ থেকে কিছু শুনতে চান।
কিন্তু হামজা শোনাবেন কি, চারপাশের শব্দে কান ঝালাপালা হওয়ার অবস্থা। কে কী বলছে বোঝা ভার। মিনিট তিনেক ধরে সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা চালালেন হামজার আশপাশে থাকা কয়েকজন। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ওই কোলাহলের মধ্যেই প্রশ্ন নিলেন হামজা, যার কিছু বোঝা গেল, কিছু বোঝাই গেল না।
এসময় তিনি বললেন, ‘ইনশাআল্লাহ আমরা উইন করমু। আমরার বিগ ড্রিমস আছে বাংলাদেশের সঙ্গে। আমি কোচ আর সবার সাথে মাতছি। ইনশাআল্লাহ আমরা উইন করিয়া প্রোগ্রেস করতাম পারমু।’
হামজার আগমনে বিমানবন্দরে হাজারো দর্শক তাকে শুভেচ্ছা জানাতে যান। সেখানে তারা ‘ওয়েলকাম টু মাদারল্যান্ড হামজা হামজা’, ‘হামজা হামজা, বলে স্লোগানে বিমানবন্দর এলাকা মুখরিত করেন।
হামজার আগমনকে ঘিরে স্নানঘাটসহ পুরো জেলায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সাজ সাজ রব পড়েছে তার নিজ গ্রামেও। হামজাকে অভিনন্দন বার্তা জানিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। এদিন প্রস্তুত করা হয় ছাদখোলা গাড়িও। তিনি বাড়িতে পৌঁছালে এলাকাবাসী তাকে বরণ করে নেন নানা আয়োজনে।
হামজার দেশে বাড়ি আসা এবারই প্রথম না৷ এর আগেও বেশ কয়েকবার মা-বাবার সঙ্গে গ্রামে এসেছেন তিনি। তবে এবার আসছেন প্রায় ১১ বছর পর। তার পরিবার জানিয়েছে, গ্রামের বাড়িতে একদিন থাকবেন হামজা। পরদিন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে তার। আর ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচ খেলতে ২০ মার্চ দলের সাথে শিলংয়ের উদ্দেশ্যে উড়াল দেওয়ার কথা রয়েছে তার।