শনিবার , ৪ মার্চ ২০২৩, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ভোর ৫:১৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শতবর্ষী এমসি কলেজে জরাজীর্ণ শহীদ মিনার

লবীব আহমদ, এমসি কলেজ প্রতিনিধি
মার্চ ৪, ২০২৩ ৪:৪১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

#মেয়রের আশ্বাসের বছর পেরিয়ে গেলেও এমসি কলেজ পায়নি শহিদ মিনার 
#শহিদ মিনারে একসাথে ৮/১০ জনের বেশি ফুল দিতে পারে না
সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিনন্দন ও নান্দনিক শহীদ মিনার থাকলেও নেই শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজে। সবুজে ঘেরা ও ১২৪ একরের এই বিশাল ক্যাম্পাসে রয়ে গেছে জীর্ণশীর্ণ শহীদ মিনার। এনিয়ে কলেজটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী সহ সংশ্লিষ্টদের রয়েছে আক্ষেপ।
এমসি কলেজের ১৫টি ডিপার্টমেন্টে ১৪ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। কলেজটির নিজস্ব ৭টি ব্লক বিশিষ্ট ছাত্র ও ২টি ছাত্রী হোস্টেল আছে। বৃহত্তর কলেজ ক্যাম্পাসে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন। জাতীয় প্রতিটি অনুষ্ঠানই যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। শহিদ দিবস, গণহত্যা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস থেকে শুরু করে সকল দিবসেই কলেজের শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যে দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। কিন্তু, এত বিশাল এই ক্যাম্পাসে রয়েছে ছোট্ট এক শহীদ মিনার। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে কলেজের সৌন্দর্য বর্ধন করা হলেও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি শহীদ মিনারে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজের বিভিন্ন জাতীয় দিবসের আগে নতুনভাবে রং করে প্রস্তুত করা হয় শহীদ মিনার। পরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন কলেজের অধ্যক্ষ, সম্পাদক পরিষদ, বিভিন্ন বিভাগ, এমসি কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন। তখন কলেজের পুকুর পাড় থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত লম্বা লাইন লেগে থাকে। পরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে গেলে একসাথে ৮/১০ জনের বেশি পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারেন না৷ অথচ একটি ডিপার্টমেন্টে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নূন্যতম হলেও হাজারেরও ওপরে।
এদিকে এমসি কলেজের পার্শ্ববর্তী মাত্র ৬৩ একরের সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার। প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালে শেষ হয় এটির নির্মাণ কাজ। ২০০৬ সালে সিলেটের টিলাগড় এলাকায় শুরু হওয়া এই ক্যাম্পাসে প্রথমে ছোট একটি শহীদ মিনার থাকলেও বর্তমানে বৃহৎ পরিসরে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার। যেটি দেখার জন্য পুরো সিলেট শহর থেকেই মানুষ আসে। এমনকি এমসি কলেজের শিক্ষার্থীরাও সেখানে যান৷ কিন্তু, ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এই এমসি ক্যাম্পাসে সেই পুরোনো শহীদ মিনারই রয়ে গেছে। সবকিছুই আভিজাত্যের ছোয়া পেলেও পায় নি এমসি কলেজের শহীদ মিনার। কলেজ সংশ্লিষ্ট সকলেই মনে করেন, এমসি কলেজে দৃষ্টিনন্দন ও নান্দনিক শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক।
২০২২ সালের ২রা মার্চ এমসি কলেজ পরিদর্শনে আসেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তখন তিনি এমসি কলেজে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার ও স্থায়ী মুক্তমঞ্চ নির্মাণের আশ্বাস দেন। তখন থেকেই নতুন দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনারের আশায় বুক বাঁধেন মুরারিচাঁদ কলেজের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু, বছর পেরিয়ে বছর পেরিয়ে গেলেও মুরারিচাঁদ কলেজ পায় নি দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার।
এবিষয়ে মুরারিচাঁদ কবিতা পরিষদের সভাপতি এনামুল ইমাম বলেন, জাতির আত্মপরিচয়ের  প্রথম সোপান, স্মৃতি আর আত্মগৌরবের শহীদ মিনার, মুরারিচাঁদ কলেজের মতো শতবর্ষী, দৃষ্টিনন্দন সবুজ যৌবনা ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে আছে জীর্ণশীর্নভাবে, এটা খুব দুঃখজনক।
মোহনা সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদ্য সাবেক সভাপতি ইমরান ইমন বলেন, মুরারিচাঁদ কলেজ শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া একটি নান্দনিক শহীদমিনার। পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা আছে। প্রয়োজন শুধু শহীদমিনার বাস্তবায়ন করা। কলেজের একজন শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে কলেজ প্রশাসনের প্রতি একটি দৃষ্টিনন্দন নান্দনিক শহীদমিনার নির্মাণের দাবি রাখছি।
এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা দিলোয়ার হোসেন রাহী বলেন, এমসি কলেজের বর্তমান শহীদ মিনার পুরাতন আদলে নির্মিত। বর্তমান সময়ের সাথে মানানসই একটি দৃষ্টিনন্দন ও নান্দনিক শহীদ মিনার প্রয়োজন বৃহৎ এই ক্যাম্পাসে। এমসি কলেজের সকল শিক্ষার্থীর এটি প্রাণের দাবী।
সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, এমসি কলেজে শহীদ মিনার থাকলেও ঐটা ছোট জায়গায়, আকারে ছোট এবং পুরনো। বর্তমানে এমসি কলেজের অনেক উন্নয়ন হচ্ছে, বড়বড় ইমারত হচ্ছে, সেখানে কলেজে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার ও এটাকে কেন্দ্র করে একটি মুক্তমঞ্চের প্রয়োজন।
স্থপতি রাজন দাস বলেন, সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ও সুন্দর এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে একটি নান্দনিকশহীদ মিনার প্রয়োজন। বর্তমানে যে জায়গায় এবং যে শহীদ মিনার আছে, সেখানে আসলে ফুল দেওয়ার ও পর্যাপ্ত জায়গা নেই। কলেজের সুন্দর একটি জায়গায় দৃষ্টিনন্দন একটি শহীদ মিনার তৈরি করা উচিত।
এমসি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর মোঃ আশরাফুল কবীর বলেন, শতবর্ষী এই কলেজে দৃষ্টিনন্দন ও নান্দনিক শহীদ মিনার প্রয়োজন। আমি এটার বিষয়ে খুব শিগগিরই প্রস্তাব পাঠাবো।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।