অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আমিনুর রহমান (র.) হুজুরের সাথে আমার অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক ছিল। আমি জোয়ারা ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসা হতে ১৯৯৩ সালে প্রথম বিভাগে আলিম পাশ করেছি। তখন থেকেই হুজুর আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তাঁর সঙ্গে আমার একটি মধূর স্মৃতি রয়েছে।
আমি ২০১৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ডিগ্রী লাভ করি। এ গবেষণার শিরোনাম ছিল “ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে চট্টগ্রাম জেলার অবদান”। এ গবেষণার তথ্য সংগ্রহের জন্য আমি ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে হুজুরের সাথে মাদ্রাসা অফিসে সাক্ষাৎকারের জন্য গিয়েছিলাম। তিনি দীর্ঘক্ষণ সময় দিয়ে আমাকে মাওলানা মঞ্জিলের বিখ্যাত আলিমগণের তথ্য প্রদান করেন এবং এ সংক্রান্ত লিখিত ডকুমেন্ট হিসেবে বেশ কিছু বইপত্রও প্রদান করেন। আমার থিসিসে চট্টগ্রাম জেলার বিশিষ্ট আলিমগণের মধ্যে চার জনই মাওলানা মঞ্জিল থেকে স্থান পেয়েছে। তাঁরা হলেন মুফতী মাওলানা শফিউর রহমান (র.), মাওলানা মুহাম্মদ আলাউদ্দীন (র.), মাওলানা অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ফখর উদ্দীন (র.), ও মাওলানা মুহাম্মদ মুসলেহ উদ্দিন (র.)।
আমার এমফিলের পরীক্ষক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল মালেক (র.) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বেলাল হোসাইন। আমার যখন থিসিসের ডিফেন্স পরীক্ষা হয়, তখন সম্মানিত পরীক্ষকগণ মাওলানা মুহাম্মদ ফখর উদ্দীন (র.) ও তাঁর গবেষণার বিষয় উল্লেখ করতঃ অত্যন্ত আবেগাপ্লত হয়ে পড়েন এবং তাঁদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। অধ্যাপক ড. আব্দুল মালেক স্যার আমাকে বলেন, “তুমি এত বড় বড় বিখ্যাত আলিমদের কথা লিখেছ, তোমার কাছ থেকে আমরা আর কি পরীক্ষা নেব”। বিষয়টি আজীবন আমার স্মৃতিপটে ভাস্বর হয়ে থাকবে। উল্লেখ্য অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আমিনুর রহমান (র.) আমাকে বিরল তথ্যাদি প্রদান করার কারণে আমার থিসিসটি অনেকাংশে সমৃদ্ধ হয়েছে বলে আমি মনে করি।
অধ্যক্ষ মাওলানা আমিনুর রহমান (র.) কুরআন, হাদীস, উসূলে হাদীস, তাফসীর, উসূলে তাফসীর, ফিক্হ, উসূলে ফিক্হ, আরবী সাহিত্য, নাহু, সরফ,বালাগাত (অলংকার শাস্ত্র), মানতিক (যুক্তিবিদ্যা), তাসাউফ (সূফীতত্ত্ব) ও ইলমে ফারায়েয শাস্ত্রে অত্যন্ত সুদক্ষ ও গভীর বুৎপত্তিসম্পন্ন আলিম ছিলেন। তাঁর পাঠদান পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী। শিক্ষার্থীগণ শ্রেণিকক্ষেই তাঁর দারস হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হতো। বাড়িতে গিয়ে খুব বেশী অধ্যয়নের প্রয়োজন হতো না। তিনি ফারায়েযের ( উত্তরাধিকার সম্পদ বন্টন পদ্ধতি) জটিল জটিল সমস্যাগুলো অনায়াসেই সমাধান করে দিতেন। এ ব্যাপারে তাঁর বিশেষ সুখ্যাতি ছিল। তিনি তাঁর নিজ বাড়ি মাওলানা মঞ্জিলে প্রতিষ্ঠিত ‘ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার’-এ নিয়মিত ইসলামী গবেষণা কার্য পরিচালনা করতেন। ইসলামী জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গবেষণা কার্যে তাঁর পদচারণা ছিল।
বিশেষত ইসলামী দাওয়াতে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয় ছিল। তিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে বহু সংখ্যক কিতাব ও পুস্তক রচনা করেন। বেশ কিছু কিতাব ও পুস্তক তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছে এবং আরও অনেক কিতাব প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। দেশ-বিদেশের বহু পত্র-পত্রিকা ও জার্নালে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর অসংখ্য জ্ঞানগর্ভ লেখা ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ইসলামী শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশে তিনি আজীবন গভীর সাধনা ও প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। ইসলামী শিক্ষার সকল বিষয়ে পারদশী সুদক্ষ আলিম ও স্বনামধন্য শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসক হিসেবে তিনি আলিম সমাজে সমাদৃত ছিলেন। মহান আল্লাহ্ তাঁর দীনি খিদমাত কবুল করুন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন। আমীন!
লেখক :
মুহাম্মদ আবু বকর ছিদ্দিক, পিএইচ.ডি. ফলপ্রার্থী (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), সিনিয়র প্রভাষক, টি এন্ড টি মহিলা কলেজ, মহাখালী, ঢাকা।
প্রাক্তন ছাত্র জোয়ারা ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা।
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।