বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নন বলে জানিয়েছেন সিলেটের খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফিজা এন্ড কোম্পানীর স্বত্ত্বাধিকারী, একাত্তরের কথা পত্রিকার প্রকাশক ও সাগরদিঘীরপার সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল। তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে তিনি পদত্যাগ করেছেন ২০২৪ সালের আগস্ট মাসেই। কিন্তু দেশের বাইরে অবস্থানরত থাকার কারণে বিষয়টি সেসময় জানানোর সুযোগ পাননি। বর্তমানে তিনি শুধুমাত্র একজন ব্যবসায়ী, ভবিষ্যতেও আর কোন রাজনীতি দলের সঙ্গে যুক্ত হবেন না বলেও ঘোষণা দেন। তার ব্যবসা ও পত্রিকা নিয়ে থাকতে চান বলে তিনি জানান।
সোমবার দুপুরে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের তিনি এ বিষয়টি জানান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বাদ জুম্মা সাগরদিঘীরপারের মৎস্য ভবন সংলগ্ন একটি জায়গা তার নেতৃত্বে দখলের চেষ্টা করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া সংবাদে তার নামের সাথে একটি রাজনৈতিক দলের পরিচয়ও দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ঘটনাটি সঠিক নয় এবং বর্তমানে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্তও নন। তিনি উল্লেখ করেন, তিনি গত বছরের ১৭ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কাছে প্রেরিত পত্রে দলীয় সকল পদ-পদবি থেকে পদত্যাগ করেছেন। লন্ডন অবস্থানকালীন সময়ে তিনি ২০২৪ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের ছাত্র সমাজের ৪ দফা দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে পরিচালিত ন্যায্য আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন।
নজরুল ইসলাম বাবুল আরও উল্লেখ করেন, তিনি বর্তমানে শুধুমাত্র একজন ব্যবসায়ী, ভবিষ্যতেও আর রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা তার নাই।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত সিটি কর্পোরেশন মেয়র পদে নির্বাচনে বিভিন্ন সরকারী সংস্থার চাপে ও ভয়ভীতিতে অংশ নিয়েছিলেন। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার নানাভাবে চাপ প্রয়োগ পাতানো নির্বাচনে তাকে ‘ট্রাম্পকার্ড’ হিসেবে ব্যবহার করে সিলেট নগরবাসীর সাথে প্রতারণা করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। একইভাবে ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে ডামি প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়। জানমাল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার স্বার্থে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে তিনি কৌশলে পাতানো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এমনকি গুম-খুনের হুমকি দিয়ে পাতানো নির্বাচনকে সুষ্ঠু দেখানোর দুরভিসন্ধি নিয়েই তাকে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল দাবি করেন তিনি।
নজরুল ইসলাম বাবুল বিএনপি ঘরনার মানুষ হিসেবে বিগত দিনে সিলেট মহানগর তাঁতী দলের সিনিয়র সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন বলে দাবি করেন। এমনকি তাঁতী দলে থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালে লামাবাজার এলাকার একটি গায়েবি মামলায় তিনি এক মাস কারাগারে ছিলেন।
সম্প্রতি সাগরদিঘীরপারের একটি জায়গা নিয়ে তাকে জড়িয়ে যেসব প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে সেটা সঠিক নয় দাবি করে তিনি বলেন, মৎস্য ভবন সংলগ্ন জায়গাটি দখলের চেষ্টা করা হয়নি বরং দখলমুক্ত করা হয়েছে। বাবুল বলেন, মৎস্য ভবনের দক্ষিণে অবস্থিত শতাধিক ডিসিমেল জায়গাকে অবৈধভাবে দখলে রেখে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ‘এসটিএস গ্রুপ’ নামে একটি গোষ্ঠী অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ আত্মসাৎ করার চেষ্টা চালায়। পরবর্তীতে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর, আরেক ভূমিখেকো চক্র ‘ড্রিম সিটি’ নাম দিয়ে ওই জায়গা দখল করে। তারা সেখানে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে এবং টর্চার সেল তৈরি করে বিভিন্ন অমানবিক কার্যকলাপ, অস্ত্র ব্যবসা এবং ধর্ষণের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। এসব কার্যকলাপ এলাকার নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে চরমভাবে বিঘ্নিত করে। বৃহত্তর সাগরদিঘীরপার, সুরমা আবাসিক এলাকা, বাগবাড়ী এবং সর্বোপরি ৯নং ওয়ার্ডের নাগরিকদের পক্ষে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত এই জায়গায় একটি স্থায়ী বা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তার সাথে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
নজরুল ইসলাম বাবুল এর আগে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য এবং সিলেট মহানগর কমিটির আহবায়ক ছিলেন। গত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন আওয়ামীলীগের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামানের কাছে। এরপরে গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার প্রার্থীতা থাকার গুঞ্জন থাকলেও শেষ সময়ে তিনি আর নির্বাচন করেন নি।