#জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবসের ওয়েবিনারে বক্তারা
“নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের অভাবে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন ধরণের অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বাড়ছে। বিশ্বে প্রতিবছর এক কোটিরও বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপের কারণে মারা যায় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এ সকল মৃত্যুর অধিকাংশই স্বাস্থ্যকর খাদ্য বিষয়ক নীতির মতো বিভিন্ন ধরনের নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খাবারে লবণের পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি আঁশযুক্ত খাবার ও পরিমিত পরিমাণে শাকসবজি গ্রহণ করা আবশ্যক।”
জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস, ২০২৫ উপলক্ষ্যে আজ রবিবার (০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত “উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকি মোকাবেলায় নিরাপদ খাদ্য” শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা। আয়োজনটির সহযোগিতায় ছিল গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য “খাদ্য হোক নিরাপদ, সুস্থ থাকুক জনগণ”।
ওয়েবিনারে বলা হয়, সর্বশেষ ‘বাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে, ২০২২’ এর তথ্য অনুযায়ী ৩৭ শতাংশ মানুষ খাবারের সাথে লবণ গ্রহণ করে এবং ১৩ শতাংশ মানুষ মাত্রাতিরিক্ত লবণযুক্ত ফাস্ট ফুড খেয়ে থাকে। এতে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ক্রমাগত বাড়ছে।
ওয়েবিনারে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) ড. মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, “আমরা ট্রান্সফ্যাট রেগুলেশন ও লেবেলিং বিধিমালাসহ অন্যান্য আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন বলেন, “উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী সবজি ও বাদামসহ অন্যান্য অপ্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি করে খেতে হবে। একই সাথে লবণ, চিনি এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট পরিহার করতে হবে।”
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামসুন্নাহার নাহিদ বলেন, “অতিরিক্ত লবণ, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও রেড মিট পরিহার করার পাশাপাশি জীবনাচরণে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।”
গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর এর বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, “নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে জনসচেতনতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আইন বা নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।”
এছাড়াও এই ওয়েবিনারে ভার্চুয়ালী যুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, ‘৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জাতীয় কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, সাপ্তাহিক নতুন কথা’র বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান এবং দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকার প্রতিনিধি ভি.ডা: রাধা কান্ত দাশ সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।
ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন প্রজ্ঞা’র কোঅর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা।
জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস, ২০২৫ উপলক্ষ্যে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত “উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকি মোকাবেলায় নিরাপদ খাদ্য” শীর্ষক ওয়েবিনারের গুরুত্ব ও এর তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা, সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, জনগণের খাদ্যাভ্যাসে পরির্বতন আনা জরুরি। জাঙ্কফুড পরিহার করে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমিত পরিমাণে মৌসুমি ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি জনসচেতনতাও বাড়ানো জরুরি। ‘মনে রাখতে হবে সুষম খাদ্য গ্রহণের সাথে কায়িক পরিশ্রম আমাদের দেহ-মনকে সুস্থ রাখবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করবে।”