# বিশ্ব নদী দিবসের আলোচনায় বক্তারা।
সিলেট বিভাগের ৩৫ টি নদী বেশি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। বিভাগের বেশিরভাগ নদীই দখলদারিত্বের কারণে তার গতিপথ হারাচ্ছে, অস্তিত্ব হারাচ্ছে, মানুষজন তার ঘরবাড়ি ও স্থাপনা নদীগর্ভে হারাচ্ছেন। একদিকে ধলাই নদীর সাদা পাথর ও যাদুকাটা নদীতে পর্যটকদের যাওয়ার জন্য আকৃষ্ট করছেন, অন্যদিকে সেখান থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন করছেন। পর্যটকরা গিয়ে সেটার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছে না শুধু অবৈধ দখলদার ও বালুমহালের কারণে। এই দখলদার ও বালুমহাল থেকে নদীর অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে নদীকে বাঁচানো প্রয়োজন।
রোববার বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আয়োজনে সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলে বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে সিলেটের নদ-নদী রক্ষায় করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার প্রতিপাদ্য ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য জলপথ’ বিষয়ে একটি উপস্থাপনা পরিবেশন করেন বেলা সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার।
অ্যাডভোকেট মো. ইরফানুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছরিন আক্তার।
এসময় বক্তারা আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদনদীর তথ্যতে সঠিক নদীর তথ্য পাওয়া যায় না৷ নদী রক্ষা কমিশনের তথ্যের সাথে দিনরাত তফাৎ এই তথ্যতে। নদী রক্ষা কমিশনের তথ্যমতে সিলেট বিভাগে নদনদীর সংখ্যা ১৬৮ টি আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে মাত্র ৩৬ টি নদী। আর এই নদীগুলোর বেশিরভাগই বিভিন্ন ব্যক্তির দখলে রয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বনাথের বাসিয়া নদীর ২ কিলোমিটারই রয়েছে ১৮৬ জনের অবৈধ দখলদারিত্বে। রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীরাই মূলত নদী দখলে জড়িত রয়েছে এবং বন্যা এলেই তারা প্রথমে এর ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। এসময় বক্তারা নদনদী খননের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছরিন আক্তার বলেন, নদীকে জীবন্ত সত্তা বলা হয়। এই নদীর বিরূপ প্রভাবের কারণেই সিন্ধু সভ্যতা বিলুপ্ত হয়। চেঙ্গেরখাল দখলদারিত্বে রয়েছে যেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কোথাও অপরিকল্পিতভাবে বালুমহাল হলে এটিতে যারা অনুমোদন দেন, তারা সকলেই দায়ী। এর দায়ভার তাদেরকে নিতেই হবে।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পীযুষ কান্তি সরকার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম, মৎস্য উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক সীমা রানী বিশ্বাস, পাউবো সিলেটের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তানভীর ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির,
আলোচনা সভার মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশ নেন সিলেট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদুল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন, সারি বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হাই আল হাদী, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সাংবাদিক ইকবাল সিদ্দিকী, ফয়সল আহমদ বাবলু, নূর আহমদ, অ্যাডভোকেট জাকিয়া জালাল, সৈয়দ মনির আহমেদ, অরুনাভ বণিক পলাশ, সাজিদুর রহমান সোহেল, ফজল খান, অ্যাডভোকেট কামাল হোসাইন, নাসির উদ্দিন আহমেদ, ফজলুল করিম সাঈদ।
নদ-নদী রক্ষায় করণীয়ের জন্য ছোট বড় নদ নদীর পুর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করতে হবে, নদীর সীমানা নির্ধারণ করতে হবে, অবৈধ দখলদারের তালিকা প্রস্তুত করে অবিলম্বে উচ্ছেদ করতে হবে, সিএস (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এসএ) ম্যাপ অনুযায়ী নদীগুলোকে পূণরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করতে হবে, নদী খনন ও দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম সমন্বিতভাবে করতে হবে, ভূমির শ্রেণী সংক্রান্ত ভুল সংশোধন করতে হবে, নদীতীর সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য্যবর্ধনের ব্যবস্থা করতে হবে, পায়ে হাটার পথ নির্মাণ করা যেতে পারে, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নকারী সকল অবকাঠামো অপসারণ করে নদীর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা।