সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় সড়কে দেয়াল দিয়ে এক অসহায় পরিবারকে দুই মাস ধরে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। যার কারণে ওই অসহায় পরিবারটি বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। এ অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য ভূক্তভোগী জেসমিন আক্তার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করেছেন।
ভুক্তভোগী জেসমিন আক্তার পৌর এলাকার বিলেরবন্দ গ্রামের মো. ইয়াসিন আহমদ লিটন। অভিযুক্ত এমাদ উদ্দিন একজন ব্যবসায়ী।
লিখিত আবেদনে জেসমিন আক্তার বলেন, কয়েক বছর ধরে প্রতিবেশী প্রভাবশালী লোকজন দ্বারা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়ে তার স্বামী লিটন আহমদ মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় আছেন। সংসার চালানোর জন্য তিনি নিজে গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রতিদিন এসএমসি কোম্পানির ওরস্যালাইন বিক্রি করেন। এই আয়েই পরিবারের ভরনপোষণ, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ ও স্বামীর চিকিৎসা ব্যয় বহন করেন। অসহায় এই পরিবারের বাড়ির জায়গা জমির ওপর পার্শ্ববর্তী বাড়ির বিত্তশালী বাসিন্দাদের চোখ পড়েছে।
জেসমিন আরও উল্লেখ করেন, আমাদের বাড়ির কিছু জায়গা আমাদের মালিকানাধীন এবং কিছু জায়গা জরিপের সময় প্রভাবশালীরা ডিসির খতিয়ানভুক্ত করিয়ে ফেলেছে। বর্তমানে ডিসির খতিয়ানের জায়গার বাৎসরিক খাজনা দিয়ে আমরা উপস্বত্ব ভোগ করছি। কিন্তু আমার স্বামী মানসিক রোগী হওয়ার সুযোগে আশপাশের প্রভাবশালী লোকজন আমাদের জায়গা জমি আত্মসাৎ করার হীন উদ্দেশ্যে আমার পরিবারকে বাড়ি ছাড়া করতে নানাভাবে আমাদেরকে চাপে রেখেছে। প্রায় প্রায় দুই মাস পূর্বে পাশের বাড়ির বাসিন্দা মৃত আব্দুল আজিজ আজই মিয়ার ছেলে জকিগঞ্জ শহরের আজিজিয়া কমিউনিটি সেন্টারের মালিক প্রভাবশালী এমাদ উদ্দিন ও তার ভাই এনাম আহমদ পরিকল্পিতভাবে আমার বাড়ির সীমানা ঘেঁষা চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির প্রবেশমুখে প্রায় ৫ ফুট উচ্চতার একটি পাকা দেয়াল নির্মাণ করে রাস্তাটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে আমরা লোক সমাজ থেকে চরমভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। সন্তানদের বিদ্যালয়ে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা বা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাড়ির প্রবেশমুখে থাকা উক্ত রাস্তাটি বহু বছর ধরে জনসাধারণের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছিল, রাস্তাটি বিলেরবন্দ-জকিগঞ্জ বাজারমুখী সরকারি পাকা সড়কে গিয়ে যুক্ত হয়েছে। যা বিত্তশালীরা বন্ধ করে আমাদের পরিবারকে কার্যত একঘরে অবস্থায় দেয়ালে আবদ্ধ করা হয়েছে। রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়াল নির্মাণ করায় চারটি সন্তানেরা নিয়মিত স্কুল, মসজিদে যেতে পারছেনা। প্রায় সময় ক্লাসে উপস্থিত হতে স্কুল থেকে শিক্ষকরা খবর পাঠালে সন্তানরা স্কুলে যাওয়ার সময় দেয়াল টপকে চলাচল করতে গিয়ে আহত হয়। এমনকি দেয়ালের ওপর টপকে চলাচলের সময়ও প্রভাবশালীরা গালিগালাজ করেন। জেমসিন আক্তারের বড় মেয়ে আগামি বছরে এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং ছোট আরো তিনটি সন্তান স্কুলে লেখাপড়া করে।
স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রভাবশালী এমাদ উদ্দিন ও এনাম আহমদ যে রাস্তাটি বন্ধ করেছেন, এ রাস্তা দিয়েই জেসমিন আক্তারের পূর্বপুরুষরাও যাতায়াত করেছেন। গ্রামবাসী বিষয়টি সমাধানের চেষ্ঠা করলেও প্রভাবশালীরা মানেনি। এমনকি জেসমিন আক্তারের স্বামী লিটন আহমদ ঘটনাটি নিয়ে মসজিদে মহল্লাবাসীর কাছে নালিশ দিলেও উল্টো প্রভাশালীদের হুমকির মুখে পড়েন।
উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সাংবাদিক কেএম মামুন জানান, উপজেলা আইনশৃঙ্খলার মাসিক সভায় জকিগঞ্জ প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে অসহায় পরিবারটিকে বিত্তশালীরা দেয়ালে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। এ বিষয়টি আমি উত্থাপন করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাটির ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে বলেছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত এমাদ উদ্দিন বলেন, আমরা উক্ত রাস্তার জায়গা খরিদ করে দেয়াল দিয়ে নিরাপদ করেছি, অন্য কারো জায়গা দখল করিনি। এখানে আগেও দেয়াল ছিল। তারা আমাদের সাথে কোনোপ্রকার যোগাযোগ না করে ইউএনও বরাবরে অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছেন এটার সমাধান করার জন্য।
এবিষয়ে জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না জানান, এই বিষয়টা আমাদের ইউএনও মহোদয় দেখছেন। তিনি আমাদেরকে জানালে আমরা আজ গিয়ে দেখে আসছি। এইবিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। উক্ত বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
