একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য ও মাহিয়া মাহির সঙ্গে অশ্লীল কথোপকথনের ফোন কলের রেকর্ড ফাঁস হওয়ায় মন্ত্রিত্ব, সংসদ সদস্য পদ ও দলীয় পদ হারিয়েছিলেন সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। এবার দলীয় প্রতীক পাননি তিনি। করছেন স্বতন্ত্র নির্বাচন। নিজ এলাকা জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করছেন তিনি।
দীর্ঘদিন আড়ালে থাকলেও বর্তমানে খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্বাচনী প্রচার নিয়ে। গতকাল সারা দিন মুরাদ হাসানের নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা যায় তিনি পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী। তাকে ঘিরে বিভিন্ন আলোচনা থাকলেও এলাকার অনেক জনগণ সেসব তেমন আমলে নিচ্ছেন না। তবে কিছু মানুষ তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে চর্চা করছে।
এই আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে কথা বলেন যমুনা সার কারখানা এলাকার বাসিন্দা দিন মজুর দুলাল মিয়া ৷ ৫৫ ছুঁই ছুঁই এই ব্যক্তির মুরাদের প্রতি আগ্রহ ও সমর্থন সবই আছে। তবে একনিষ্ঠ নৌকার সমর্থক। তাই মুরাদ হাসানকে নিয়ে কিছুটা হতাশা আছে তাঁর মনে। স্থানীয় ভাষায় দুলাল বলেন, ‘নায়িকা নিয়ে এসব কর্মকাণ্ড না ঘটালে কী এবার তার নৌকা ছাড়া নির্বাচন করতে হয়? এলাকায় তার ভালো জনপ্রিয়তা, তারপরও নৌকা পেল অন্য কেউ। এসব না ঘটালে নৌকা কোনো দিনই অন্য কেউ পেতো না।’
সরিষাবাড়ী সদর আরামনগর বাজার এলাকায় কথা হয় নতুন ও তরুণ ভোটার শফিকুর রহমানের সঙ্গে। মুরাদের এলাকাভিত্তিক প্রভাব ও জনপ্রিয়তার কথা স্বীকার করেন এই তরুণ। তবে তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে মাঝে মাঝেই বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ৷ তিনি বলেন, ‘তাঁর এমন কর্মকাণ্ডর জন্য দেশের যেকোনো প্রান্তে গেলেই আমাদের ট্রল-টিটকারির শিকার হতে হয়। তখন বিষয়টা খুব খারাপ লাগে। উনি আমাদের জন্য এমন টিটকারির বদলে সম্মান বয়ে আনতে পারতেন ৷ সেই যোগ্যতা ও সম্ভাবনাও তাঁর ছিল।’
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে জড়িয়ে ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে পাশে থাকা অটো চালক রওশন মিয়া বলেন, ‘এইরকম ঘটনা অনেকেই ঘটায়। কারোটা ফাঁস হয় আবার কারোটা হয় না। মন্ত্রীরটা (মুরাদ) হয়েছে ৷ এটার সঙ্গে আমাদের লেনাদেনা খুব কম। উনি এলাকার জন্য কাজ করছে কী-না সেইটাই আমাদের দেখার বিষয়। ভোট দেওয়ার সময় আমি এইটাই দেখব।’
দুলাল, শফিকুর আর রওশনের মতো আরও অনেকে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে নানা মতামত দিচ্ছেন। এসব কতটা প্রভাব ফেলবে মুরাদের ওপর সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে জানুয়ারির ৭ তারিখ পর্যন্ত। তবে এই আসনে মূল লড়াইটা হবে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী মাহবুবুর রহমান হেলাল আর স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর মধ্যে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল মার্কা নিয়ে লড়ছেন সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান ও ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী ঢাকার তেজগাঁও আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদ।