# সিলেটে এবছর ৬৯ টি পশুর হাট রয়েছে।
সিলেটে এখনো জমে উঠে নি কোরবানীর পশুর হাট। প্রতিবার ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই হাটে বেচাকেনা শুরু হলেও এবার সেই চিত্র নেই। আগামী দিনগুলোতে বাজার জমবে বলে আশায় আছেন বিক্রেতারা। তবে বিভিন্ন জায়গায় ২/৩ জন করে গরু নিয়ে বসছেন।
সরেজমিন মঙ্গলবার বিকেলে সিলেটের অন্যতম প্রধান হাট কাজির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবার এক সপ্তাহ আগে থেকেই হাটে ক্রেতা উপস্থিতি বেশি থাকলেও এবার তা নেই। বিক্রেতারা অধিক আগ্রহ নিয়ে বসে থাকলেও মনমতো ক্রেতা পাচ্ছেন না। যার কারণে গরু বিক্রি করতে পারছেন না তারা। ভালো বিকিকিনি না হওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে এক শূন্যতা বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবার কোরবানীর ঈদে সবধরনের মানুষ থাকলেও এবার এক দলের মানুষ নেই। যার কারণে আরো কমেছে ক্রেতা উপস্থিতি। তখন সরকারদলীয় লোকজন থাকায় বাজারে ক্রেতা উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তখন আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি সহ প্রায় সব দলের লোকজনই ছিল কোরবানীর হাটে। গতবছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা রয়েছেন দেশের বাহিরে। যার কারণে মুষ্টিসংখ্যক মানুষজন এবার হাট থেকে দূরে রয়েছেন।
নগরের সাপ্লাই রোডের চাষনী পীরের মাজার গেইট, সুবিদ বাজার এলাকায় ২/৩ জনকে গরু নিয়ে অবৈধ হাটে বসতে দেখা যায়। সেখানে ক্রেতা উপস্থিতি না থাকলেও তারা বসে আছেন। স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে ২/১ জন করে শুরু করেই অবৈধ হাট বসে।
কাজির বাজারে সিলেটের জকিগঞ্জের শাহগলি থেকে আসা ছাগল বিক্রেতা নিজাম উদ্দিন জানান, এক সপ্তাহ আগে ২৮ টি ছাগল নিয়ে আসছি। মাত্র ৩ টি বিক্রি করেছি। মানুষজন নেই, বিক্রিও নেই। প্রতিবছর এত দিনে সবগুলোই বিক্রি করে ফেলতাম। এবার আর তা হচ্ছে না। মানুষজন যারাই আসে, শুধু দাম জিজ্ঞেস করেই চলে যায়। সামনে আরো ৩/৪ দিন আছে, দেখা যাক কি হয়।
শহরের শেখঘাট থেকে গরু কিনতে আসা আব্দুস সালাম জানান, এবার গরু কম। আগে এরকম ৩/৪ দিন আগে আসলে হাটাই যেত না। আর আজ তেমন মানুষ নেই। দেখতেছি গরু। মনমতো পাচ্ছি না। গরু পছন্দ হলেও দামে হয় না। লাখ টাকার নিচে যেন গরুই নেই।
সারা বছর গরুর ব্যবসা করা নগরের তেমুখী এলাকার গরু ব্যবসায়ী ময়না মিয়া জানান, সোমবার রাতে ১২ টি গরু নিয়ে আসছি। মঙ্গলবার সকালে ১ টি গরু বিক্রি হয়েছে। আমার এখানে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮০ হাজার টাকার গরু রয়েছে। ভালো দাম পেলে বাকিগুলোও বিক্রি করতে পারবো। মানুষজন কম আসছেন, যার কারণে বিকি হচ্ছে না। তবে আশা করা যায়, কাল থেকে মানুষজনের আনাগোনা বাড়বে।
কাজির বাজার গরুর হাটের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন লুলন জানান, বাজারের অবস্থা ভালো আছে। বুধবার থেকে আশা করা যায় মানুষজনের উপস্থিতি আরো বাড়বে। আর এখন ক্রেতারা আসছেন, গরু দেখছেন, দামদর করতেছেন। তবে শহরের লোকজন ঈদের আগেরদিনই গরু কিনে। কারণ এটি রাখার জন্য আলাদা জায়গারও প্রয়োজন রয়েছে। আগে বিভিন্ন জায়গায় গরুর গাড়ি আটকানো হলেও এবার প্রশাসনিকভাবে শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার কারণে কেউ আটকানোর কোনো অভিযোগ পাচ্ছি না।
সিলেটের জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এবছর সিলেটে ৬৯ টি অস্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। এর মধ্যে জেলায় ৬২টি ও নগরে ৭ টি হাট রয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, এসএমপির আওতাধীন এলাকায় প্রায় ১৭ টি জায়গায় কোরবানীর হাট রয়েছে। এখনো ভালোভাবে হাট বসে নি। যার কারণে কোনো অভিযোগ পাচ্ছি না আমরা। সব জায়গায়ই পুলিশি নিরাপত্তা রয়েছে। কোথাও গাড়ি আটকানোর বা গরু ছিনিয়ে নেওয়া কোনো অভিযোগ কেউ এখনো পর্যন্ত করে নি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার জানান, আমাদের অনুমোদিত ৭ টি কোরবানীর হাট রয়েছে। এছাড়া আর কোনো হাট নেই। কেউ অবৈধ হাট নিয়ে বসলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।