কবির আল মাহমুদ, স্পেন : দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের দেশ অ্যান্ডোরার সঙ্গে জনকূটনীতি, বাণিজ্যিক ও শিক্ষাসহ বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে।। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী ফ্রান্স ও স্পেনের মাঝে অবস্থিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পিরেনিজ পাহাড়ঘেরা অ্যান্ডোরা।
অ্যান্ডোরার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে স্পেন, অ্যান্ডোরা ও নিরক্ষীয় গিনিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ সম্ভাবনা ও প্রত্যাশার নতুন দিক উন্মোচিত হয়।
দেশটির ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২ দিনের সফরের সময় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত।
গত মঙ্গলবার রাজধানী অ্যান্ডোরা লা ভেইয়া-তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়া উবাখ ফন্টের-বৈঠকে বিভিন্নখাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ব্যাপ্তি সম্প্রসারণের বিষয়ে উভয়পক্ষ একমত হন।
এসময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত অ্যান্ডোরার অব্যাহত সমৃদ্ধি কামনা করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
পরদিন বুধবার দেশটির স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ অ্যান্ডোরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত ‘অ্যান্ডোরায় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ।
প্রবন্ধে, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বশান্তির দর্শন ও পররাষ্ট্রনীতি, ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বসম্প্রদায়ের দায়িত্বের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রূপকল্প স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ অ্যান্ডোরা-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিস্তৃতিসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত।
সেমিনারে অ্যান্ডোরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর (উপাচার্য) মিক্যুয়েল নিকোলাউ ভিলা জানান, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে একাডেমিক পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সহযোগিতা বিনিময় কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তার বিশ্ববিদ্যালয় শীঘ্রই একটি সমঝোতা স্মারক প্রস্তাব করবে।
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান নাদিয়া বৌদাদি, ভার্চ্যুয়াল শিক্ষা সম্প্রসারণ কেন্দ্রের পরিচালক মন্টসেরাত রামোনেত, বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যশিক্ষা অনুষদ প্রধান ভার্জিনিয়া রাদা এবং এন্ডোরার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনীতিক ও অন্যান্য খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ উপস্থিত ছিলেন।
অ্যান্ডোরা চেম্বার অব কমার্স, ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সার্ভিসেসের প্রেসিডেন্ট জোসেফ মাস টরেসসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে রাষ্ট্রদূত জানান, শতভাগ আমদানি নির্ভর দেশ অ্যান্ডোরা, বাংলাদেশ থেকে তৈরিপোশাক, পাট ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ এবং ভোগ্যপণ্য সরাসরি আমদানির মাধ্যমে লাভবান হতে পারে।
বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, হাইটেক পার্ক ও বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে বিনিয়োগ করে সরকার ঘোষিত আকর্ষণীয় প্রণোদনার সুযোগ গ্রহণের জন্যও রাষ্ট্রদূত অ্যান্ডোরার ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
অ্যান্ডোরা চেম্বারের প্রেসিডেন্ট জোসেফ মাস টরেস বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সর্ম্পক জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তার দেশের ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
এ ছাড়া দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যান্ডোরা বিজনেস’ এর শিক্ষা ও সবুজ- প্রযুক্তি অনুবিভাগের কর্মাধ্যক্ষ কার্লেস আলেইক্সের সঙ্গে বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার এবং পর্যটনখাতে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।