বঙ্গভবন থেকে বিদায় নিলেন সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।নতুন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তিনি।
বঙ্গভবনে তাকে দেয়া হয় বিদায়ী গার্ড অব অনার। লাল গালিচা সংবর্ধনার পাশাপাশি তাকে পুষ্পশোভিত গাড়িতে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে বিদায় জানানো হয়। দুই মেয়াদে বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে দীর্ঘ ১০ বছর ৪১ দিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে রাজসিক এই আয়োজনে বঙ্গভবন থেকে বিদায় নিলেন আবদুল হামিদ।
এর আগে আজ সকাল ১১টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে দেশের ২২তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন মো. সাহাবুদ্দিন। তারপর চেয়ার বদলের মাধ্যমে তার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা সারেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। কিছুক্ষণ পর বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল মাঠে শুরু হয় তার বিদায় পর্ব।
বেলা ১টার পর শুরু হওয়া এই বিদায় অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্টের গার্ড রেজিমেন্টের সুসজ্জিত একটি দল বিদায়ী গার্ড অব অনার দেয় আবদুল হামিদকে। অগ্রভাগে ঝাণ্ডা হতে অশ্বারোহী দল, তাদের পেছনে তিন বাহিনীর ব্যান্ড দল বাদ্যযন্ত্রে তুলছিল দেশাত্মবোধক গানের সুর। এরপর তিনি লাল গালিচায় হেঁটে গার্ড পরিদর্শন করেন।
গার্ড অব অনার পর্ব শেষে আবদুল হামিদ ও তার সহধর্মিণী রাশিদা খানম ওঠেন ফুল দিয়ে সাজানো একটি খোলা জিপে। বঙ্গভবনের বক ফোয়ারা থেকে প্রতীকী কায়দায় সেই প্যারেড কারকে দুটি রশি ধরে টেনে মূল ফটকে টেনে নিয়ে যান বঙ্গভবনের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরারা। ধীর গতিতে যখন গাড়ি এগোচ্ছিল, দুই পাশ থেকে ফুল ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন বঙ্গভবনের কর্মীরা। আবদুল হামিদ হাত নেড়ে জবাব দিচ্ছিলেন অভিবাদনের।
খোলা জিপটি বঙ্গভবনের মূল ফটকে পৌঁছালে আবদুল হামিদ ও রাশিদা খানম একটি কালো রঙের গাড়িতে ওঠেন। সেখানে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের তত্ত্বাবধায়নে মোটর শোভাযাত্রা করে তারা পৌঁছান নিকুঞ্জে তাদের বাড়ি রাষ্ট্রপতি লজে।
শপথ নিলেন দেশের ২২তম প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন
বাড়িতে প্রবেশের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, তার যেটুকু সাফল্য, সেজন্য তিনি দেশের মানুষের কাছে, এলাকার মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মোটামুটি স্বাধীনভাবে’ কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন, সেজন্য তার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ। আর কৃতজ্ঞ সাংবাদিকদের কাছে, কারণ তার বক্তব্য তারা ‘টুইস্ট না করে’ জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
এই যে রোদের মধ্যে আপনারা এসেছেন, আমার মত একজন সাধারণ মানুষের জন্য। যদিও আমি প্রেসিডেন্ট হয়েছিলাম, তবুও আমি সব সময় নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ মনে করি। আমার যে রাজনীতি, সেটা ছিল সাধারণ মানুষের জন্য। চেষ্টা করেছি দেশে সুষ্ঠু স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে, আগামীতেও চেষ্টা থাকবে। দেশের মানুষ সব দিক থেকে ভালো থাকুক, সুখী থাকুক সেটি চাই।
১৯৪৪ সালের ১লা জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্ম নেন আবদুল হামিদ। ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে সে সময়ের ময়মনসিংহ-১৮ (বর্তমানে কিশোরগঞ্জ-৪) আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি দেশ স্বাধীন করতে অস্ত্র ধরেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ২০১৩ সালে আব্দুল হামিদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে সরকার।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচন, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচন, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনেও তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।
সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ এর ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ এর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসাবে সংসদ পরিচালনা করেন আবদুল হামিদ। নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মত স্পিকার হন।
দেশের ১৯তম প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমানের অসুস্থতার কারণে ২০১৩ সালের ১১ই মার্চ অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান আবদুল হামিদ। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। ২৪ এপ্রিল শপথ নেন দেশের ২০তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে। এরপর ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেন।