পলো বাঁশ দিয়ে তৈরি মাছ শিকারের এক ধরনের ফাঁদ। এক সময় পলো দিয়ে মাছ শিকার করা বেশ জনপ্রিয় ছিল গ্রামীণ সমাজে। বিশেষ করে পৌষ-মাঘ মাসে বিল বা উন্মুক্ত হাওরে দল বেঁধে মাছ শিকার করা হতো। একেই বলা হয় পলো পলো-বাওয়া উৎসব।
জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় এবং কালের পরিক্রমায় এখন সেই উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে এখনো হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি বিলে পলো-বাওয়া উৎসব নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী খনকারীপাড়া গ্রামের বিলে অনুষ্ঠিত হয়েছে পলো-বাওয়া উৎসব। সকাল সাড়ে ১১টায় ঐতিহ্যবাহী এই পলো উৎসবে অংশ নিয়েছেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত নানা বয়সের কয়েক হাজার মানুষ।
দু’ঘণ্টাব্যাপী চলা এই উৎসব শেষে সবাইকে কম-বেশি মাছ নিয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। শোল, গজার, বোয়াল, বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরেছেন অনেকেই।
নবীগঞ্জ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের মাছ শিকারি মো. সাহেল আহমেদ প্রিন্স বলেন, ছোটবেলায় দেখতাম অনেক বড় করে এই পলো উৎসব অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু এখন আর আগের মতো হয়না, আর মাছও পাওয়া যায় না। তবুও প্রতিবছরই এই পলো উৎসবে আসি।
পৌর এলাকার চরগাও গ্রামের মাছ শিকারী আলমগীর চৌধুরী বলেন, এখানে মাছ ধরাটা মুখ্য নয়। হাজার হাজার মানুষের সাথে মাছ ধরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে খুবই ভালো লাগে। তাই প্রতিবছরই আসি। তবে যারা নিয়মিত মাছ ধরেন তাদের সাথে আমরা পারিনা। কিন্তু সত্যি কথা ভালো লাগার কারণেই আসা।
খনকারীপাড়া গ্রামের শাহ্ বুলবুল আলম চিশতী বলেন, ‘এলাকার নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। তবে মাছ না পাওয়া গেলেও ভালো লাগে তাই, উৎসবের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছরই আমাদের গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে পলো বাইছ উৎসবের আয়োজন করা হয়।’
তারা বলেন- ‘এটি বাঙালি ঐতিহ্যের একটি উৎসব। এই উৎসবকে টিকিয়ে রাখতে নদী-জলাশয় রক্ষাসহ মাছের প্রজনন বৃদ্ধির জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবকে বাঁচিয়ে রাখতে নদী রক্ষার দাবি জানিয়েছে উৎসবে আসা মানুষজন। পাশাপাশি মাছের প্রজনন বৃদ্ধির জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান তারা।