যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ম্যানহাটান ক্রিমিনাল কোর্টে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ প্রমাণিত হলে অর্থাৎ ট্রাম্প যদি দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে তাকে ৩৪ কাউন্টে মোট ১৩৬ বছর কারাগারে থাকতে হবে। অর্থাৎ ৩৪টি অপরাধের প্রতিটির জন্যে তার সর্বোচ্চ ৪ বছর করে কারাদণ্ডের আশংকা রয়েছে। অপরাধ নিয়ে কর্মরত আইনজীবীরা এ কথা বলেছেন।
তবে সবটাই নির্ভর করবে আদালতের ওপর। আদালত ইচ্ছা করলে সবগুলো অভিযোগের সাজা একইসাথে ভোগের নির্দেশ দিতেও পারেন। সে ক্ষেত্রে ট্রাম্পকে সর্বোচ্চ ৪ বছর কারাগারে থাকতে হবে। উল্লেখ্য যে, ৪ এপ্রিল নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটান আদালতে আত্মসমর্পণের পর ট্রাম্প সবগুলো অভিযোগেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। আরো উল্লেখ্য, এই মামলার উদ্ভব হয়েছে ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় থাকাকালে পর্নতারকা স্টর্মি ডেনিয়েলসের মুখ বন্ধ রাখতে ট্রাম্প তার আইনজীবী মাইকেল কহেনের মাধ্যমে তাকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন। স্টর্মি ডেনিয়েলসের সাথে ট্রাম্পের অবৈধ যৌন-সম্পর্কের কথা ছড়িয়ে পড়লে তা ভোটারের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে মনে করেই ট্রাম্প ঐ পন্থা অবলম্বন করেছিলেন। এক্ষেত্রে আইনজীবী কহেনকে কিস্তিতে ঐ অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তথ্য। অর্থাৎ ট্রাম্প তার অপকর্ম চাপা দিতে কহেনকে নিজ ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের আইনগত পরামর্শ প্রদানের ফি হিসেবে ঐ অর্থ প্রদান করেছেন বলে চালিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ম্যানহাটান ডিস্ট্রিক্ট এটর্নির তদন্তে তা সর্বৈব মিথ্যা ও জালিয়াতি হিসেবে প্রমাণিত হবার পরই দায়ের করা হয় চাঞ্চল্যকর এই মামলা।
প্রসিকিউটররা অবশ্য উল্লেখ করেছেন যে, উত্থাপিত অভিযোগসমূহ প্রমাণিত হলেও বাধ্যতামূলক কারাদণ্ডের বিধান নেই। কারণ, এর আগে আর কোন অপরাধের জন্যে ট্রাম্প কখনোই দোষী সাব্যস্ত হননি অথবা কারাবরণ করেননি। প্রথমবার অপরাধের জন্যে ট্রাম্পকে হয়তো কারাগারে না-ও পাঠাতে হতে পারে। তবে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে পুনরায় প্রার্থী হবার যোগ্যতা হারাতে পারেন যদি সামনের বছরের নভেম্বরের আগেই ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হয়ে উচ্চতর আদালতে আপিলের সুযোগও কাজে লাগাতে না পারেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, নিউইয়র্ক প্যানেল আইনের ১৭৫ ধারা অনুযায়ী ভুয়া ব্যবসায়িক রেকর্ড তৈরি করার ৩৪টি অভিযোগ আনা হয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণের পর জামিন লাভ করেন ট্রাম্প এবং এরপরই তার বিরুদ্ধে অভিযোগসমূহ পাঠ করা হয়। সে সময় ট্রাম্প স্থির থাকলেও ক্ষুব্ধ ছিলেন। যদিও তার আচরণে ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেনি। বিচারকও তার প্রতি আহবান জানিয়েছেন শান্ত থাকার জন্যে। এরফলে ট্রাম্প আগে যে হুমকি দিয়েছিলেন হত্যাসহ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের, তার কোনটিই দৃশ্যমান হয়নি। তার সমর্থকেরা ম্যানহাটানের বিভিন্ন স্থানে, আদালতের সামনে জড়ো হলেও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়নি। যদিও নিউইয়র্ক পুলিশের পক্ষ থেকে যে কোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যে প্রস্তুতি ছিল এবং তা সর্বত্র দৃশ্যমানও হয়েছে।
এ মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে আইনজীবীরা জানান, নিউইয়র্ক স্টেটে ব্যবসায়িক রেকর্ড জাল করা একটি বড় ধরনের অপরাধ। অধিকন্তু ট্রাম্প একটি জালিয়াতিকে চাপা দিতে আরেকটি জালিয়াতি অর্থাৎ বারবারই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন আইনকে ধোকা দিতে। এক্ষেত্রে ডিস্ট্রিক্ট এটর্নি আলভিন ব্র্যাগকে প্রমাণ করতে হবে যে, ট্রাম্প ২০০৬ সালের একটি অভিযোগ ধামাচাপা দিতে প্রাপ্ত বয়স্ক ন্যুড ফিল্ম তারকা স্টর্মি ডেনিয়েলসকে ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগের দিনগুলোতে কয়েক কিস্তিতে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার প্রদানের ঘটনা লুকানোর অভিপ্রায়ে মিথ্যা ব্যবসার জাল কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছিল।
ট্রাম্প আদালতে হাজিরা দিয়ে ফ্লোরিডার উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগের সময় ডিস্ট্রিক্ট এটর্নি আলভিন কোর্ট প্রাঙ্গনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কথিত জালিয়াতির স্কিমটি নিউইয়র্কের নির্বাচনী আইনকে ফাঁকি দেয়ার মতলবে করা হয়। অর্থাৎ নির্বাচনী আইন লংঘনের মত গুরুতর অপরাধও করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। নির্বাচনের প্রচারাভিযানের অর্থ তিনি ব্যয় করেছেন নিজের অনৈতিক আচরণকে চাপা দিতে এবং তা ব্যয় করা হয় ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে। শুধু তাই নয়, ফেডারেল আইন অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারের জন্যে ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমাকেও ছাড়িয়ে গেছে ট্রাম্পের ঐ স্কিম। এটর্নি মাইক কহেন ট্রাম্পের নির্দেশ অনুযায়ী ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগেই এক লাখ ৩০ হাজার ডলার স্টর্মি ডেনিয়েলসকে প্রদান করেন নিজ একাউন্ট থেকে। ২০১৭ সালে সেই অর্থ কিস্তিতে কহেনকে প্রদান করেছেন ট্রাম্প এবং সে সব চেক ইস্যু করা হয় ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্যে আইনগত সহায়তা প্রদানের ফি হিসেবে। মামলায় এহেন আচরণকে গুরুতর অপরাধ ও জালিয়াতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।