মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, সিলেটের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে কথা বলায় বোর্ডের অপর একজন কর্মকর্তাকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অন্যদিকে, দুর্নীতিতে জড়িত দুই জন কর্মকর্তা জালিয়াতি মামলায় অভিযোগ আদালতে গৃহিত হলেও তারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের কালাপুর গ্রামের বাসিন্দা, বোর্ডের চাকরিচ্যুত সেকশন অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি এসব বিষয়ে বোর্ড সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
মঙ্গলবার (৯ মে) সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গত ২০০০ সালের ১৪ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড সিলেট-এ সেকশন অফিসার পদে যোগদান করি। শিক্ষা বোর্ডের যাত্রালগ্ন থেকে প্রশাসন শাখায় দায়িত্ব পালনকালে কতিপয় অসৎ দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়। যে কারণে কর্মচারীদের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় আমি কয়েক দফা পদোন্নতি বঞ্চিত হই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন প্রকার জাল জালিয়াতিতে জড়িত। তারা শিক্ষাবোর্ডের চাকরিবিধি জাল করে ২০১৯ সালে কয়েক দফা পদোন্নতি/চলতি দায়িত্ব আদায় করে নেয়। এর প্রেক্ষিতে আমি ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি মহানগর দায়রা জজ আদালত, সিলেট আদালতে ২ জন সাবেক চেয়ারম্যান ও ১০ জন কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিশেষ মামলা (নম্বর-০৫/২০২০) দায়ের করি। মামলাটি বর্তমানে দুদক, সিলেট কার্যালয়ে তদন্তাধীন রয়েছে।’
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পরবর্তীতে ২০২১ সালের সিলেট শিক্ষা বোর্ড এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন নির্বাচনের ফলাফল কুক্ষিগত করার জন্য বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. রমা বিজয় সরকার ও বর্তমান সচিব (তৎকালীন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক) প্রফেসর মো. কবির আহমদের সহযোগিতায় কয়েকজন কর্মকর্তাকে অর্ন্তভুক্ত করে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেন। এতে আমি আপত্তি জানাই এবং এক পর্যায়ে ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে শ্রম আদালত, সিলেটে বি.এল. এল. (আই.আর) মামলা দায়ের করি।’
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. রমা বিজয় সরকার ও বর্তমান সচিব প্রফেসর মো. কবির আহমদ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন বলে অভিযোগ করেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি তাদেরকে আসামি করে শ্রম আদালত, সিলেট এ বি.এল.এল. ফৌজদারী মামলা নং-৬০/২০২১ দায়ের করি। পরবর্তীতে তারা বর্তমান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর অরুন চন্দ্র পালকে আহŸায়ক করে একটি লোক দেখানো তদন্ত বোর্ড গঠন করেন এবং তদন্ত কর্মকর্তা মূল বিষয় পর্যালোচনা না করে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে আমাকে চূড়ান্ত বরখান্ত করার সুপারিশ করেন।’
ড. রমা বিজয় সরকার বোর্ড কমিটির কোনোও অনুমোদন না নিয়ে দি ইন্টারমেডিয়েট এন্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন অর্ডিনেন্স, ১৯৬১ লঙ্ঘন করে তাকে চূড়ান্ত বরখান্ত করেন বলে অভিযোগ করেন এই কর্মকর্তা। এ আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি বলে জানান তিনি।
শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তারা দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করছেন বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাবোর্ডে কর্মরত মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মো. সাইফুল আলম (আপন দুই ভাই) অফিস বহির্ভূত একটি জালিয়াতি মামলায় অভিযুক্ত। আদালতের নির্দেশে সিআইডি তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান করেছে। গত ২২ নভেম্বর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, সিলেট তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। কিন্তু তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত না করে পূর্ণ বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাসহ দাপ্তরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’
শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ড. রমা বিজয় সরকার বোর্ডের অর্থ তহবিল ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাক্তন চেয়ারম্যান (বর্তমানে বোর্ড কমিটির অন্যতম সদস্য) প্রফেসর মো. আব্দুল কুদ্দুছ ২০১৯ সালে ঢালাওভাবে পদোন্নতি/চলতি দায়িত্ব প্রদান করে নিহার কান্তি রায় ও মো. আলমগীর কবিরকে হিসাব শাখার সার্বিক দায়িত্ব প্রদান করেন। ড. রমা বিজয় সরকার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষা বোর্ডের তহবিল স্বীয় ব্যক্তিগত স্বার্থে অবাধে ব্যবহার করছেন।’ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, সিলেট এর বোর্ড কমিটির সদস্যদের প্রতি এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। তাঁরা যেন দেশে প্রচলিত আইন কানুন ও সংশ্লিষ্ট বিধি বিধানের আলোকে সুবিচারমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সে অনুরোধ জানান তিনি।