সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদা পাথর পর্যটন ঘাটের দরপত্রের টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলা পরিষদ চত্বরে মারামারির এ ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক ইকবাল হোসেন (৫২) ও তার ভাই কামাল হোসেন (৪০)। তাদেরকে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিবদমান দুটি পক্ষের লোকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এক পক্ষের নেতা উপজেলা পরিষদের সাবেক অস্থায়ী চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলী জানান, ‘এবার সরকারি মূল্যের পাশাপাশি সমঝোতায় অতিরিক্ত ২ কোটি ১০ লাখ টাকায় পর্যটন ঘাট ইজারা নেয় কাজী মোস্তাফিজ গ্রুপ। অতিরিক্ত এই টাকা ব্যাংকের পে-অর্ডারসহ যাদের সিডিউল রয়েছে, তাদেরকে দেওয়ার কথা। কিন্তু, আলফু এবং কালা চেয়ারম্যান সব টাকা বন্টন না করে নিজেরা মেরে দিতে চায়। প্রতিবাদ করায় তারা আমার সাথে দ্বন্দ্বে জড়ায়। এ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে তারা আমার দুই ভাইকে মারধর করেছে।’
অপরপক্ষের নেতা তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল অদুদ আলফু মিয়া জানান, ‘ইয়াকুব ভাই আমার বড় ভাই। আমার রাজনৈতিক সহকর্মী। আমাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য হয়ে থাকে। আজকেও ইয়াকুব ভাই একটি বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করছিলেন। এ নিয়ে সামান্য কথা-কাটাকাটি হয়। এটি সাথে সাথে শেষও হয়। এর মধ্যেই ইয়াকুব ভাইর মানুষ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পরিষদের মাঠে আসায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে। এর জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
এদিকে, ঘটনার নিষ্পত্তি করতে বুধবার রাত ৭টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আহবানে পরিষদের সভাকক্ষে বৈঠক হয়। বৈঠকে গোয়াইনঘাট সার্কেলের এএসপি প্রবাস কুমার সিংহ, উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমদ, ওসি হিল্লোল রায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলী কালা মিয়া, উপজেলা পরিষদের সাবেক অস্থায়ী চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান লাল মিয়া, তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল অদুদ আলফু মিয়া, ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর আলম, সাবেক চেয়ারম্যান বাবুল মিয়াসহ স্থানীয় গণ্যমান্য মুরুব্বিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উভয়পক্ষকে আর বিবাদে না জড়াতে অনুরোধ করা হয়। শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুসিকান্ত হাজং জানান, সমঝোতা একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। আমাদের দেখার বিষয়- এখানে সরকারের স্বার্থ ক্ষুন্ন হচ্ছে কিনা। তবে, এটিকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা উভয়পক্ষকে ডেকে শান্ত থাকতে বলেছি।
জানা গেছে, গত ১২ মার্চ সাদা পাথর পর্যটন ঘাট ও ভোলাগঞ্জ দশ নম্বর গাড়ি পার্কিং এলাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রথম দফায় ইজারামূল্য সন্তোষজনক না হওয়ায় সর্বশেষ ২৭ মার্চ পুনঃদরপত্রের সিডিউল বিক্রি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে ৩৭৩ টি শিডিউল বিক্রি হলেও জমা পড়ে মাত্র তিনটি। দরপত্র জমা দেওয়া তিন ব্যক্তি হলেন- কাজী মোস্তাফিজুর রহমান, তোয়াহির আলী ও দিলোয়ার মাহমুদ রিপন। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা কাজী মোস্তাফিজুর রহমান ১ কোটি ১৮ লক্ষ টাকার দর জমা দেন। যা সরকারি মূল্যের চেয়ে মাত্র ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা বেশি।
অভিযোগ রয়েছে- ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা সমঝোতা করে দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করেন। কেউ বেশি মূল্য দিতে রাজি থাকলেও তাদেরকে টেন্ডার ড্রপ করতে দেওয়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, তারা শিডিউল কিনেছিলেন। সমঝোতার কথা বলে তাদেরকে জমা দিতে দেওয়া হয়নি।
দরপত্র-প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত একটি সূত্রের দাবি- সাদা পাথর পর্যটন ঘাটের ইজারা প্রদানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের চাপে অপেক্ষাকৃত কম দামেই পর্যটন ঘাটের ইজারা দিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।