‘তারুণ্যের ছোঁয়ায় নতুন সূর্যোদয়, আলোকিত সমাজ গড়ার অটুট’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে বুকে লালন করে ২০০৮ সালের ১৫ মে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু করে কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংঘ। শুদ্ধ বাংলা সংস্কৃতি চর্চা এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াই এই সংগঠনের প্রধান কাজ।
সোমবার (১৫ মে) সকল জরাজীর্ণকে পেছনে ফেলে পনেরোতে পা দিল সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই জনপ্রিয় সংগঠনটি। আত্মপ্রকাশের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখছে কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংঘ।
কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংঘের লোগো তে রয়েছে সবুজে মোড়ানো লাল সূর্য, যার রয়েছে ৭টি রশ্মি এবং নিচে নীল প্রবাহ। রংধনুর রং হচ্ছে এ সাতটি রং। পৃথিবী যেমন বৃষ্টিস্নাত হয়ে তার সব জরাজীর্ণতাকে দূর করে নতুন রূপে আবির্ভূত হয়, আকাশে দেখায় সাত রঙের আলোকচ্ছটা তেমনি ‘কৃষ্ণচূড়া’ সাংস্কৃতিক সংঘের লোগোটিতে সাত রঙের ব্যবহার প্রকাশ করে নতুন সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান। বৃত্তের ভেতর লাল সবুজ আমাদের জাতীয় প্রতীক। নীল রঙের প্রবাহটি সমুদ্র প্রবাহ নির্দেশ করে, যে প্রবাহ দিয়ে মানুষের হৃদয় বিশাল ও মহান হওয়ার ভাব ব্যক্ত করে।
সোমবার দুপুর ১টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে ড. এম এম মাহবুব আলমের সভাপতিত্বে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. জামাল উদ্দিন ভূঞা।
শোভাযাত্রা পরবর্তী একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সিকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ডা. জামাল উদ্দিন ভূঞা। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও কৃষি অর্থনীতির ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ শাহ আলমগীর, ছাত্র পরামর্শ নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক মোস্তফা শামসুজ্জামান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বেপারীসহ কৃষ্ণচূড়ার শিক্ষক উপদেষ্টা ও সংগঠনের সদস্যবৃন্দ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সিকৃবি শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সিকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ডা মোঃ জামাল উদ্দিন ভূঞার হাত ধরেই কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতির সংঘের যাত্রা শুরু হয়েছিলো। এসম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আসলে বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি জায়গা যেখানে ছাত্ররা শুধু পড়াশোনা করতে আসে না। পড়াশোনার বাইরেও তাদের একটি দলে সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারা, খেলাধুলা, নেতৃত্ব গুনাবলি সহ নানাধরণের সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ছাত্র যখন গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করে দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষা নিতে যায় বা দেশের মধ্যেই ভালো কোনো চাকরি করতে চায় তখন কিন্তু এই গুনাবলিগুলা খুব ভালোভাবেই মূল্যায়ন করা হয়। আর কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংগঠনটিও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক মনোভাবাপন্ন করে গড়ে তোলা, সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধিসহ তাদের শিক্ষা ও মননে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংগঠনের ১৫ তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আমি এই সংগঠনের উত্তরোত্তর কল্যান কামনা করি।’
কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতির সংগঠনের সভাপতি প্রফেসর ড. এম এম মাহবুব আলম বলেন,‘কৃষ্ণচূড়া সংগঠনটি ২০০৮ সালে আমাদের বর্তমান উপাচার্য মহোদয়ের হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছিলো। ১৫ বছরের এই লম্বা যাত্রায় সংগঠনটি নানামূখী প্রতিকূলতা ও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হয়েছে। অতীতে সংগঠনের সকল নেতা-কর্মীরা যেভাবে সংগঠনটিকে আগলে রেখেছে ভবিষ্যতেও এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।’
এসময় উপাচার্যসহ সংগঠনের সদস্যরা শহিদ মিনারের পাশে একটি কৃষ্ণচূড়াসহ মোট তিনটি বৃক্ষরোপণ করেন।
এছাড়াও সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে জাঁকজমকপূর্ণ একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কৃষ্ণচূড়া।