সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের দিরাই উপজেলায় এবছর বোরো ধান চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। বোরো মৌসুমের ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। এবার ফলন ভালো হওয়ায় তাদের মুখে যেন হাসির ঝিলিক। ভালো ফলন ও দাম ভালো থাকায় খুশি তারা। কিছুটা শ্রমিক সংকট থাকার পরও একটু বাড়তি শ্রম দিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলে নিচ্ছেন কৃষকরা। আনন্দের সাথে ধান কেটে মাড়াই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সেই সঙ্গে কৃষাণীরাও বসে নেই। তারাও মনের আনন্দে ধান শুকিয়ে গোলায় তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার হাওরপাড়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আগাম সময়ে যারা বোরো ধান রোপণ করেছেন, সেই সব কৃষকের ধান কাটা প্রায় শেষ। অনেকে আবার জমিতে কেটে রাখা ধান ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত। তবে, যেসব জমিতে দেরি করে ধান রোপণ করা হয়েছিল, সে সব জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে সময় লাগবে আরও ১-২ সপ্তাহ। আর কিছু জমিতে শ্রমিকের বিকল্প ধান কাটার কাজ করছে অত্যাধুনিক হারভেস্টার মেশিন।
কৃষকরা বলছেন, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে খুবই অল্প সময়ে শত শত বিঘা জমির ধান কাটা সম্ভব। পাশাপাশি শ্রমিকের চেয়ে অনেক কম দামে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে এই অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে। শ্রমিকের মাধ্যমে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ হচ্ছে ৩-৪ হাজার টাকা।
অপর দিকে, হারভেস্টার মেশিনের সাহায্যে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ হচ্ছে মাত্র ২ হাজার টাকা। এছাড়াও অত্যাধুনিক হারভেস্টার মেশিনের সাহায্যে ধান কাটলে ধান মাড়াই করার আর কোনও ঝামেলা থাকছে না। তবে কৃষকদের দাবি, রোপণ থেকে শুরু করে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত শ্রমিক, সার, কীটনাশক ও জ্বালানির দাম বাড়ায় তাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ অবস্থায় কেবল ধানের দাম ভালো পেলেই লাভবান হতে পারবেন তারা।
তারা জানান, সার, কীটনাশক, জ্বালানি তেল ও শ্রমিকের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফসলের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সে হিসেবে জমিতে ধান রোপণ থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রতি বিঘায় প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। বিঘা প্রতি ফলন হচ্ছে প্রায় ২৩-২৬ মণ। কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং বাজারে ভালো দাম পেলে লাভবান হতে পারবেন তারা।
উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল মুহিত চৌধুরী জানান, আর কয়েক দিনের মধ্যেই ধান কাটা শেষ হবে, যারা আগাম জাতের ধান আবাদ করেছেন। তাদের এখনই ধান কাটা প্রায় শেষ। এখন ধান শুকিয়ে গোলায় তোলার পালা।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে দিরাই পৌর শহরসহ উপজেলায় ৯টি ইউনিয়নে হাইব্রিড বোরো, উফশী বোরো, স্থানীয় বোরোসহ বিভিন্ন জাতের মোট ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত হাওরের ৮৯ শতাংশ ধান কর্তন করা হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া ও প্রকৃতি ধান চাষের অনুকূলে থাকায় মাঠে তেমন কোনো রোগ বালাইয়ের আক্রমণ দেখা যায়নি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ মৌসুমে ফলন ভালো হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনোরঞ্জন অধিকারী জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ সার্বক্ষণিক কৃষকদের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা এ মৌসুমে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৫ হাজার ২শ’ জন কৃষকদের জনপ্রতি ২ কেজি বোরো হাইব্রিড বীজ, ১০ কেজি করে ডিএপি সার ও ৩ হাজার ৮শ’ জন কৃষককে জনপ্রতি ৫ কেজি করে উফশী বীজ, ১০ কেজি এমওপি সার দিয়েছি। এছাড়াও সরকার কর্তৃক ভর্তুকি মূল্যে উপজেলার কৃষকদের মাঝে ১৫টি কম্বাইন হারভেস্টার, ১০টি রিপার ও ১১টি পাওয়ার থ্রেসার মেশিন বিতরণ করা হয়েছে।